
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচিত উক্তি
বাংলা সাহিত্যের অমর সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম শুনলেই মনে আসে তাঁর অনবদ্য রচনা ও মনোমুগ্ধকর উক্তি। উনিশ শতকের এই বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক ও সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের গদ্য ও উপন্যাসের জগতে এনেছেন নতুনত্ব। তাঁর রচনায় যে জীবনদর্শন ও তত্ত্ববোধের প্রতিফলন ঘটে, তা আমাদের চিরকাল অনুপ্রাণিত করে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচিত উক্তি গুলি আজও পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায় এবং জীবনের নানা দিক নিয়ে ভাবায়।
সূচিপত্রঃ
প্রারম্ভিক জীবন ও সাহিত্যিক অবদান
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ২৬ জুন ১৮৩৮ সালে, বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের কাঁঠালপাড়া গ্রামে। তাঁর পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ডেপুটি কালেক্টর। শিক্ষাজীবন শুরু হয় হুগলি মহসিন কলেজে। পরে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যিক কর্মজীবনের শুরু হয় ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের মাধ্যমে। এরপর একে একে তিনি রচনা করেন ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘মৃণালিনী’, ‘বিষবৃক্ষ’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘আনন্দমঠ’ প্রভৃতি উপন্যাস। তাঁর রচিত ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের ‘বন্দে মাতরম’ গানটি আজও ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচিত উক্তি
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচিত উক্তি গুলি বিভিন্ন দিক থেকে জীবন, প্রেম, সমাজ এবং দর্শন নিয়ে আমাদের ভাবায়। তাঁর উক্তিগুলি থেকে কিছু নির্বাচিত উদাহরণ এখানে তুলে ধরা হলো:
জীবন ও দর্শন নিয়ে উক্তি
“এ পৃথিবীর সুখ নহে সুখ ও দুঃখময়, কোন সুখেই সুখ নাই কোন সুখই সম্পূর্ণ নহে।”
জীবনের দ্বৈত প্রকৃতি নিয়ে তাঁর এই উক্তি।
“পাহাড় যত নিকট দেখায়, তত নিকট নয়।”
জীবনের কঠিন সত্য বুঝিয়ে দিয়েছেন।
“পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছো?”
জীবনের যাত্রার প্রতীক।
“অর্থই একমাত্র সত্য, বাকি সব মিথ্যা।”
বাস্তব জীবনের অর্থের গুরুত্ব।
“মানুষের জীবনে চিরকাল শুধুমাত্র সংগ্রাম।”
সংগ্রামের মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য।
“আশা করাই জীবনের সর্বাপেক্ষা বড় মিথ্যা।”
জীবনে অতিরিক্ত আশা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ।
“সময় একমাত্র এমন ধন যা ফেরত পাওয়া যায় না।”
সময়ের অমূল্যতা তুলে ধরেছেন।
“যতই পাণ্ডিত্যের অহঙ্কার করো, জীবন সবার জন্যই একই।”
জীবন সকলের জন্য সমান।
“আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটে, তা সবই শিক্ষার অংশ।”
প্রতিটি ঘটনা থেকে শেখার আহ্বান।
“মানুষ কখনও পূর্ণতা পায় না, তবে চেষ্টা করতেই হয়।”
প্রচেষ্টা এবং চেষ্টার মূল্য।
“মৃত্যুই জীবনের একমাত্র নির্ভরযোগ্য সত্য।”
জীবনের শেষ সত্য।
“যা কিছু পাও, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।”
সন্তুষ্টির মূল্য।
“জীবন একটি পরীক্ষামূলক ক্ষেত্র।”
জীবনের প্রতিটি ঘটনা একটি পরীক্ষা।
“সুখ ও দুঃখ দুইই জীবনের অংশ।”
সুখ-দুঃখ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
“প্রত্যেক মানুষ তার নিজের সৃষ্টির ফল ভোগ করে।”
কর্মফলের তত্ত্ব।
“প্রত্যেকের জীবনে কোনো না কোনো দুঃখ থাকে।”
জীবনের দুঃখ অবশ্যম্ভাবী।
“সত্যই সর্বাপেক্ষা বড় ধর্ম।”
সত্যের গুরুত্ব।
“অপেক্ষাই জীবনের একমাত্র ধারাবাহিকতা।”
অপেক্ষা জীবনের অংশ।
“যে ব্যক্তি সত্যিকারের মুক্তি চায়, তাকে ত্যাগ শিখতে হবে।”
ত্যাগের গুরুত্ব।
“বই পড়াই জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আনন্দ।”
বই পড়ার আনন্দ।
প্রেম ও সম্পর্ক নিয়ে উক্তি
“যাহাকে ভালবাস তাহাকে নয়নের আড় করি ও না।”
সত্যিকারের ভালোবাসা লুকানো যায় না।
“তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেনো?”
সম্পর্কের মূল্য এবং মানবতার গুরুত্ব।
“যে প্রেমে কোনো বাধা নেই, সেই প্রেমই সত্যিকারের প্রেম।”
নিরবচ্ছিন্ন প্রেমের কথা।
“ভালোবাসা হলো জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।”
ভালোবাসার গুরুত্ব।
“প্রেমে শুধু আনন্দ নয়, কষ্টও থাকে।”
প্রেমের মিশ্র অনুভূতি।
“যে প্রেমে ত্যাগ নেই, সে প্রেম অপূর্ণ।”
ত্যাগের মূল্য প্রেমে।
“প্রেমের কোনো সীমা নেই, সে নিরবচ্ছিন্ন।”
প্রেমের অবারিততা।
“প্রেমের প্রকৃত রূপ হলো ত্যাগ।”
ত্যাগই প্রেমের প্রকৃত সৌন্দর্য।
“প্রেমে কোনো শর্ত থাকে না।”
নিঃশর্ত প্রেমের গুরুত্ব।
“প্রেম হলো জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা।”
প্রেমের শিক্ষামূলক দিক।
“প্রেমের সাথে সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি পায়।”
সম্পর্কের গভীরতার বৃদ্ধি।
“প্রেম মানুষকে পরিবর্তন করতে পারে।”
প্রেমের পরিবর্তনশীল শক্তি।
“যে প্রেমে বন্ধুত্ব নেই, সে প্রেম স্থায়ী হয় না।”
বন্ধুত্বের ভূমিকা প্রেমে।
“প্রেম হলো জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ধন।”
প্রেমের মূল্য।
“প্রেম ছাড়া জীবন অপূর্ণ।”
প্রেমহীন জীবনের অসম্পূর্ণতা।
“প্রেমে দয়া এবং সহানুভূতির প্রয়োজন।”
দয়া ও সহানুভূতির প্রয়োজনীয়তা।
“প্রেমের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করে।”
আত্মআবিষ্কারের মাধ্যম প্রেম।
“প্রেম হলো জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
প্রেমের শক্তি।
“প্রেমের মাধ্যমে সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়।”
সম্পর্কের দৃঢ়তা।
“প্রেম মানুষকে মহৎ করে তোলে।”
প্রেমের মহত্ত্ব।
সামাজিক মন্তব্য নিয়ে উক্তি
“কতকগুলি লোক আছে, এদেশের লোক তাহাদের বর্ণনার সময় বলে, “ইহারা কুকুর মারে, কিন্তু হাঁড়ি ফেলে না৷”
সমাজের দ্বিচারিতা।
“এই সংসারে বিশেষ দুঃখ এই যে মরিবার সময়ে কেহ মরে না।”
জীবনের অনিশ্চয়তা।
“সৎ পথে চলে যে, সে কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।”
সততার মূল্য।
“সমাজের উন্নতি শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়।”
সমাজের উন্নতির দায়িত্ব সকলের।
“মানুষ তার কার্যকলাপের মাধ্যমেই পরিচিত হয়।”
কর্মের মাধ্যমে পরিচিতি।
“যে সমাজে ন্যায় নেই, সে সমাজ ধ্বংসের পথে।”
ন্যায়ের প্রয়োজনীয়তা।
“সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য।”
সামাজিক দায়িত্ব পালন।
“অন্যায়ের প্রতিবাদ না করাও অন্যায়।”
প্রতিবাদের গুরুত্ব।
“সমাজের উন্নতির জন্য শিক্ষার প্রয়োজন।”
শিক্ষার গুরুত্ব।
“সমাজে নারীর অবস্থান উন্নত করা উচিত।”
নারীর অবস্থানের উন্নতি।
“সৎ মানুষের সংখ্যা বাড়ানো উচিত।”
সততার প্রয়োজন।
“যে সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না, সে সমাজ ধ্বংস হয়।”
প্রতিবাদের অভাব।
“সমাজে সমতা থাকা উচিত।”
সমতার প্রয়োজন।
“সমাজের উন্নতির জন্য সবার অবদান প্রয়োজন।”
সবার অবদান।
“সমাজে সৎ মানুষের কদর করা উচিত।”
সৎ মানুষের কদর।
“সমাজের উন্নতির জন্য শিক্ষার প্রসার করা উচিত।”
শিক্ষার প্রসার।
“সমাজের উন্নতির জন্য শাসকের সদিচ্ছা প্রয়োজন।”
শাসকের সদিচ্ছা।
“সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা উচিত।”
ন্যায় প্রতিষ্ঠা।
“সমাজে সবার অধিকার থাকা উচিত।”
সবার অধিকার।
“সমাজের উন্নতির জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”
সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তির সমাজের উপর প্রভাব
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচিত উক্তি গুলি শুধুমাত্র সাহিত্যিক সৌন্দর্যেই সমৃদ্ধ নয়, বরং তারা সমাজের বাস্তবতা ও জীবনের নানা দিক নিয়ে গভীর চিন্তা উদ্রেক করে। তাঁর উক্তিগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যার সমাধানে পথ দেখায়। সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজে যে পরিবর্তন আনা যায়, তা তিনি তাঁর রচনাগুলির মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তিগুলির প্রধান থিম কি?
বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তিগুলির প্রধান থিম হল জীবন, প্রেম, সমাজ এবং দর্শন। তাঁর উক্তিগুলি জীবনের নানা দিক নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবায়।
তাঁর উক্তিগুলি আধুনিক বাংলা সাহিত্যে কি প্রভাব ফেলেছে?
বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তিগুলি আধুনিক বাংলা সাহিত্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাঁর উক্তিগুলি আজও পাঠকদের মধ্যে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে এবং জীবন ও সমাজ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
তাঁর বিখ্যাত উক্তিগুলির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কি?
বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তিগুলির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট উনিশ শতকের বাংলা সমাজ ও ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব। তাঁর উক্তিগুলি সেই সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন।
উপসংহার
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচিত উক্তি গুলি আমাদের জীবনের নানা দিক নিয়ে ভাবায় এবং আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। তাঁর উক্তিগুলি শুধু সাহিত্যিক সৌন্দর্যেই সমৃদ্ধ নয়, বরং তারা আমাদের জীবনের নানা সমস্যার সমাধানে পথ দেখায়। বাংলা সাহিত্যের এই মহান লেখকের অবদান আমাদের চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে।